PBF টেস্ট কেন করা হয়?

PBF (Peripheral Blood Film) টেস্ট, যা পেরিফেরাল ব্লাড স্মিয়ার নামেও পরিচিত, এটি একটি বিশেষ ধরনের রক্ত পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় কাঁচের স্লাইডে এক ফোঁটা রক্তকে পাতলা করে ছড়িয়ে (স্মিয়ার) দেওয়া হয় এবং তারপর স্টেইন (বিশেষ রঙ) করে অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করা হয়।

সাধারণত, কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (CBC) পরীক্ষায় কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা পড়লে বা নির্দিষ্ট কিছু রোগের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকেরা এই পরীক্ষাটি করার পরামর্শ দেন। সিবিসি পরীক্ষা যেখানে রক্তের কোষের সংখ্যা এবং সাধারণ কিছু পরিমাপ জানায়, সেখানে পিবিএফ পরীক্ষা রক্তের কোষগুলোর গঠন, আকার, আকৃতি এবং সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে একটি বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরে।

PBF টেস্ট কেন করা হয়?

পিবিএফ টেস্টের প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলো:

১. রক্তের কোষের অস্বাভাবিকতা নির্ণয়:

এটি রক্তের প্রধান তিন ধরনের কোষের গঠনগত ত্রুটি খুঁজে বের করতে সাহায্য করে:

  • লোহিত রক্তকণিকা (RBC): কোষগুলোর আকার (ছোট বা বড়), আকৃতি (যেমন- কাস্তের মতো, ডিম্বাকৃতি), রঙ এবং বিন্যাসে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা দেখা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের রক্তাল্পতা (Anemia) যেমন – থ্যালাসেমিয়া, সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা ইত্যাদি নির্ণয় করা হয়।
  • শ্বেত রক্তকণিকা (WBC): বিভিন্ন ধরণের শ্বেত রক্তকণিকার (নিউট্রোফিল, লিম্ফোসাইট, মনোসাইট ইত্যাদি) অনুপাত এবং তাদের অপরিণত কোষের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। লিউকেমিয়া (রক্তের ক্যান্সার), লিম্ফোমা বা মারাত্মক কোনো সংক্রমণের ক্ষেত্রে শ্বেত রক্তকণিকার গঠনে পরিবর্তন আসতে পারে, যা এই পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে।
  • অণুচক্রিকা (Platelets): প্লেটলেটের সংখ্যা এবং আকার স্বাভাবিক আছে কিনা তা দেখা হয়। এদের সংখ্যা কমে বা বেড়ে গেলে রক্ত জমাট বাঁধা সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়।

২. সিবিসি (CBC) রিপোর্টের অস্বাভাবিকতা যাচাই:

যদি অটোমেটেড সিবিসি অ্যানালাইজারের রিপোর্টে কোনো অস্বাভাবিক ফলাফল (যেমন – হিমোগ্লোবিন অনেক কম বা শ্বেত কণিকার সংখ্যা অনেক বেশি) আসে, তখন সেই ফলাফলের কারণ নিশ্চিত করার জন্য প্যাথলজিস্ট নিজে মাইক্রোস্কোপের নিচে রক্তের কোষগুলো পরীক্ষা করেন।

৩. রক্তের পরজীবী শনাক্তকরণ:

ম্যালেরিয়া বা ফাইলেরিয়ার মতো রোগ নির্ণয়ের জন্য এই পরীক্ষা অত্যন্ত কার্যকর। কারণ এক্ষেত্রে রক্তের লোহিত রক্তকণিকার ভেতরে পরজীবীর উপস্থিতি সরাসরি দেখা সম্ভব হয়।

৪. বিভিন্ন রোগের পর্যবেক্ষণ:

কেমোথেরাপি নিচ্ছেন এমন ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রভাব পর্যবেক্ষণের জন্য বা বিভিন্ন হেমাটোলজিকাল (রক্ত সম্পর্কিত) রোগের ফলো-আপ করার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়।

৫. নির্দিষ্ট রোগের লক্ষণ অনুসন্ধান:

যখন কোনো ব্যক্তির মধ্যে ক্রমাগত ক্লান্তি, জন্ডিস, অস্বাভাবিক রক্তপাত, ঘন ঘন সংক্রমণ বা শরীরের ওজন (অকারণে) কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তখন তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য PBF টেস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

সংক্ষেপে, PBF টেস্ট হলো একটি গভীর পর্যবেক্ষণমূলক পরীক্ষা যা রক্তের কোষগুলোর স্বাস্থ্য এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে, যা রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসায় চিকিৎসকদের ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button