CBC টেস্ট কেন করা হয়?

সিবিসি বা কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (Complete Blood Count) হলো একটি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের বিভিন্ন উপাদান ও তাদের পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যায়। চিকিৎসকেরা একজন ব্যক্তির সামগ্রিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন করতে এবং বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও পর্যবেক্ষণের জন্য এই পরীক্ষাটি করার পরামর্শ দেন।

সিবিসি (CBC) টেস্ট কেন করা হয়?

সিবিসি টেস্ট একাধিক কারণে করা হয়ে থাকে। এর প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলো:

  • সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে সিবিসি টেস্ট করা হয়। এর মাধ্যমে শরীরের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া যায় এবং কোনো সুপ্ত রোগ থাকলে তা প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
  • রোগ নির্ণয়: বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখা দিলে তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য সিবিসি টেস্ট অত্যন্ত জরুরি। যেমন:
    • অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা: শরীরে ক্লান্তি, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট বা ফ্যাকাশে ভাব দেখা দিলে হিমোগ্লোবিন ও লোহিত রক্তকণিকার (RBC) পরিমাণ দেখার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়।
    • সংক্রমণ (Infection): জ্বর, কাঁপুনি, বা শরীরের কোনো অংশে প্রদাহ হলে শ্বেত রক্তকণিকার (WBC) মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি সাধারণত সংক্রমণের লক্ষণ।
    • রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা: অস্বাভাবিক রক্তপাত বা ত্বকে সহজে কালশিটে দাগ পড়লে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেটের (Platelet) সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য সিবিসি টেস্ট জরুরি।
    • রক্তের ক্যান্সার (Leukemia): অস্বাভাবিক মাত্রায় শ্বেত রক্তকণিকার বৃদ্ধি রক্তের ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে।
  • রোগ পর্যবেক্ষণ: কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়মিত সিবিসি টেস্ট করা হয়। যেমন, কেমোথেরাপি চলাকালীন রোগীর রক্তের কোষের সংখ্যা নিরীক্ষণ করার জন্য এই পরীক্ষা অপরিহার্য।
  • অস্ত্রোপচারের পূর্বে: যেকোনো বড় অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর শারীরিক সক্ষমতা এবং রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা স্বাভাবিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য সিবিসি টেস্ট করা হয়।

সিবিসি টেস্টে কী কী দেখা হয়?

এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের প্রধান তিনটি কোষীয় উপাদানসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিমাপ করা হয়:

  • লোহিত রক্তকণিকা (Red Blood Cells – RBC): এই কণিকাগুলো ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সারা শরীরে বহন করে নিয়ে যায়। এর সংখ্যা কম হলে রক্তাল্পতা দেখা দেয়।
  • শ্বেত রক্তকণিকা (White Blood Cells – WBC): এরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রধান সৈনিক। যেকোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা কম হওয়া রোগের লক্ষণ।
  • হিমোগ্লোবিন (Hemoglobin – Hb): এটি লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত একটি প্রোটিন যা অক্সিজেন বহন করে। এর মাত্রা রক্তাল্পতা নির্ণয়ে সহায়ক।
  • হেমাটোক্রিট (Hematocrit – Hct): রক্তে লোহিত রক্তকণিকার শতকরা পরিমাণকে হেমাটোক্রিট বলে।
  • অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট (Platelets): রক্ত জমাট বাঁধতে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে। ডেঙ্গুর মতো রোগে এর সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে।
  • এমসিভি (MCV – Mean Corpuscular Volume): এটি লোহিত রক্তকণিকার গড় আকার নির্দেশ করে, যা বিভিন্ন ধরণের রক্তাল্পতা সনাক্ত করতে সাহায্য করে।

সংক্ষেপে, সিবিসি একটি সুলভ ও সহজলভ্য পরীক্ষা যা চিকিৎসকদেরকে রোগীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা দিতে এবং সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *