জ্বর কমানোর ১০টি অব্যর্থ ঘরোয়া প্রতিকার: সহজ এবং নিরাপদ উপায়

জ্বর, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, প্রায়শই আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে। এটি কোনো রোগ নয়, বরং রোগের একটি লক্ষণ। জ্বর হলে শরীর জানান দেয় যে কোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়েছে। তবে অতিরিক্ত জ্বর বা দীর্ঘস্থায়ী জ্বর শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে কিছু সহজ এবং নিরাপদ ঘরোয়া প্রতিকার খোঁজেন। এই পোস্টে আমরা জ্বর কমানোর এমন ১০টি অব্যর্থ ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনার জ্বর কমাতে সাহায্য করতে পারে।
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
জ্বর হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায়, ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা জ্বরের সময় একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। তাই এই সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা জরুরি। শুধু পানি নয়, বিভিন্ন তরল খাবার যেমন – ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ বা লেবুর পানিও পান করতে পারেন। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়।
২. ঠান্ডা পানির পটি দিন
জ্বর কমানোর সবচেয়ে প্রচলিত এবং কার্যকর পদ্ধতি হলো ঠান্ডা পানির পটি দেওয়া। একটি নরম কাপড় বা তোয়ালে ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে ভালোভাবে নিংড়ে নিন। এরপর এই ভেজা কাপড়টি কপালে, ঘাড়ে, বগলে এবং কুঁচকির অংশে রাখুন। এটি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে দারুণ কার্যকর। ভেজা কাপড়টি কিছুক্ষণ পর পর পরিবর্তন করুন।
৩. হালকা গরম পানিতে গোসল করুন
জ্বরের সময় ঠান্ডা পানিতে গোসল করা উচিত নয়, কারণ এতে শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ কমে গিয়ে কাঁপুনি হতে পারে। বরং হালকা গরম পানিতে গোসল করলে এটি শরীরের তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে এবং পেশী শিথিল করে ব্যথা উপশম করে। গরম পানি বাষ্পের মাধ্যমে শরীরের তাপ বের করে দেয়।
৪. তুলসি পাতা ব্যবহার করুন
তুলসি পাতা তার ঔষধি গুণের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত। এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান জ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। কয়েকটা তুলসি পাতা এক গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটে অর্ধেক হয়ে গেলে ছেঁকে নিন এবং এই মিশ্রণটি ঠান্ডা করে পান করুন। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
৫. আদা ও মধু মিশ্রণ
আদা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এটি ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আদা কুচি করে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন। এতে সামান্য মধু মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার পান করুন। এটি গলা ব্যথা কমাতেও সহায়ক।
৬. আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার জ্বরের সময় খুবই উপকারী। এটি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানিতে এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে পারেন। এছাড়াও, হালকা গরম পানিতে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে তাতে কাপড় ভিজিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে পটি দিতে পারেন।
৭. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
শরীর যখন অসুস্থ থাকে, তখন এর মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। জ্বরের সময় পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং শরীরের শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করে। কোনো ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকুন এবং যতটা সম্ভব বিছানায় শুয়ে থাকুন।
৮. আরামদায়ক পোশাক পরুন
জ্বর হলে শরীর গরম লাগলেও মোটা কাপড় বা কম্বল জড়িয়ে থাকা উচিত নয়। এতে শরীরের তাপ বাইরে বের হতে পারে না, ফলে জ্বর আরও বেড়ে যেতে পারে। পাতলা এবং আরামদায়ক সুতির পোশাক পরুন, যাতে শরীর থেকে তাপ সহজে বের হতে পারে।
৯. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন
জ্বরের সময় অনেকেই খাবারের রুচি হারিয়ে ফেলেন। তবে এই সময় শরীরের শক্তি ফিরিয়ে আনতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। হালকা এবং হজম হয় এমন খাবার, যেমন – সবজির স্যুপ, খিচুড়ি, নরম ভাত এবং সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন। ভিটামিন সি যুক্ত ফল, যেমন – কমলা বা লেবু খাওয়াও উপকারী।
১০. কিসমিস ও জিরা পানি
কিসমিস শরীরের রক্ত পরিশোধন করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কয়েকটা কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর এই পানি ফুটিয়ে ছেঁকে নিন এবং পান করুন। এছাড়া, জিরা পানিও জ্বরের জন্য খুব উপকারী। এক চামচ জিরা এক গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে পান করলে তা শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
সতর্কতা
এইসব ঘরোয়া প্রতিকার জ্বরের প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যকরী হতে পারে। তবে যদি জ্বর ১০২°F-এর বেশি থাকে, তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা এর সঙ্গে অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ (যেমন: শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, প্রচণ্ড মাথাব্যথা) দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
জ্বরের চিকিৎসার জন্য সিটি ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার কাশিমপুর শাখা
ঘরোয়া ভাবে আপনার জ্বর না কমলে, আপনাকে খুব দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। সিটি ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আজকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগন। আপনি অল্প ভিজিটে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে পারবেন এখানেই। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তালিকা থেকে সিরিয়াল দিন আমাদের হটলাইনে কল করে।